পরিবাহীর ধারকত্ব

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ২য় পত্র | NCTB BOOK

    কোনো বস্তুতে তাপ প্রয়োগ করলে যেমন এর তাপমাত্রা বাড়ে তেমনি কোনো পরিবাহীকে আধান প্রদান করলে এর বিভব বাড়ে। যত বেশি আধান দেয়া হয় বিভবও তত বেশি বাড়ে। তাপবিজ্ঞানে কোনো বস্তুর তাপমাত্রার একক বাড়াতে যে পরিমাণ তাপের প্রয়োজন হয় তাকে তাপ ধারকত্ব বলে। অনুরূপভাবে স্থির তড়িতে যে রাশি পাওয়া যায় তাই আধান ধারকত্ব।

    সংজ্ঞা : কোনো পরিবাহীর বিভব প্রতি একক বাড়াতে যে পরিমাণ আধানের প্রয়োজন হয় তাকে ঐ পরিবাহীর আধান ধারকত্ব বলে। 

    ব্যাখ্যা : কোনো পরিবাহীর বিভব V পরিমাণ বাড়াতে যদি Q পরিমাণ আধানের প্রয়োজন হয়, তবে বিভব একক পরিমাণে বাড়াতে QVপরিমাণ আধানের প্রয়োজন হয়। সুতরাং আধাম ধারকত্ব,

C=Qv

গোলাকার পরিবাহীর ধারকত্ব

   ধরা যাক, ব্যাসার্ধের একটি গোলক A-কে K তড়িৎ মাধ্যমাঙ্কবিশিষ্ট কোনো মাধ্যমে স্থাপন করা হলো। এতে + q পরিমাণ আধান দিয়ে ধনাত্মকভাবে আহিত করা হলো। এর ফলে এর বিভব V হলো। অতএব, এর ধারকত্ব,

 C=qv

   গোলকে স্থাপিত আধান গোলক পৃষ্ঠের সর্বত্র সমভাবে ছড়িয়ে পড়বে। ফলে গোলকের পৃষ্ঠ থেকে বলরেখাসমূহ লম্বভাবে সকল দিকে নির্গত হবে [চিত্র ২.১৪ (ক)]।

চিত্র :২.১৪

   এ সকল বলরেখাকে পেছন দিকে বাড়ালে এগুলো গোলকের কেন্দ্রে মিলিত হবে। আবার যদি ধরা যায়, ৭ আধান গোলকের কেন্দ্রে অবস্থিত আছে, তাহলেও বলরেখাগুলো ঠিক একই রূপ হবে [চিত্র ২.১৪ (খ)]। সুতরাং q একক আধান গোলকের পৃষ্ঠে বণ্টিত থাকলে এবং q একক আধান গোলকের কেন্দ্রে অবস্থিত থাকলে বলরেখা একই রূপ হয়। অতএব, একক আধান গোলকের পৃষ্ঠে স্থাপিত হলেও এই আধানকে গোলকের কেন্দ্রে কেন্দ্রীভূত বলে বিবেচনা করা যায়। তাই গোলকের পৃষ্ঠে বিভব তথা গোলকের বিভব,

V=14πoKqr

  বিভবের এই মান ধারকত্বের উপরিউক্ত সমীকরণে বসিয়ে আমরা পাই, C =4πoKr

 গোলকটি যদি বায়ুতে বা শূন্যস্থানে অবস্থিত হয়, তাহলে

 K = 1, সুতরাং C = 4πor

  এ থেকে দেখা যায় যে, গোলকের ধারকত্ব এর ব্যাসার্ধের সমানুপাতিক।

সমান্তরাল পাত ধারক

    দুটি সমান্তরাল পরিবাহক পাত দ্বারা এই ধারক তৈরি করা হয়। একই আকৃতির এবং একই ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট দুটি পাত সমান্তরালভাবে পাশাপাশি রেখে কোনো অন্তরক মাধ্যম দ্বারা যদি বিচ্ছিন্ন করা হয় তাহলে একটি সমান্তরাল পাত ধারক তৈরি হয় [চিত্র ২.১৫]। একটি তড়িৎকোষের সাথে সংযোগ দিয়ে ধারকটিকে আহিত করা হয় ।

ধরা যাক,

চিত্র :২.১৫

   A = ধারকের প্রত্যেক পাতের ক্ষেত্রফল ।

  d = পাতদ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব।

  E = পাতদ্বয়ের মধ্যবর্তী মাধ্যমের ভেদনযোগ্যতা।

  Q = প্রত্যেক পাতে মোট আধান।

  V = পাতদ্বয়ের বিভব পার্থক্য ।

   σ=QA = প্রত্যেক পাতে আধান ঘনত্ব । 

সুতরাং ধারকের ধারকত্ব  C=Qv... (2.27)

   ধারকের পাত দুটি খুব কাছাকাছি অবস্থিত বলে মধ্যবর্তী স্থানে বলরেখাগুলো পরস্পর সমান্তরাল হতে দেখা যায় [চিত্র ২.১৬]। সুতরাং পাত দুটির মধ্যবর্তী স্থানে তড়িৎ প্রাবল্য সর্বত্র সুষম হবে, কারণ ধনাত্মক পাতের একক ক্ষেত্রফল থেকে যত সংখ্যক বলরেখা নির্গত হবে মধ্যবর্তী স্থানের যে কোনো একক ক্ষেত্রফলের মধ্য দিয়ে তত সংখ্যক বলরেখা অতিক্রম করবে।

চিত্র :২.১৬

   সুতরাং পাতদ্বয়ের পৃষ্ঠের তড়িৎ প্রাবল্য এবং পাতদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানের তড়িৎ প্রাবল্য একই হবে। কিন্তু আমরা আধান ঘনত্বের সাথে প্রাবল্যের সম্পর্ক থেকে জানি, কোনো পাতের পৃষ্ঠে তড়িৎ প্রাবল্য E=σ। সুতরাং সমান্তরাল পাত ধারকের পাতদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে তড়িৎ প্রাবল্য হবে,

  E=σ

বা, E=QA

V=QdA

(2.27) সমীকরণে এই মান বসিয়ে আমরা পাই,

C=QAQd

পাতদ্বয়ের মধ্যবর্তী মাধ্যমে বায়ু হলে,  =o (শূন্যস্থানের ভেদনযোগ্যতা) ধরা যায়। সেক্ষেত্রে

:- C=σAd

ধারকত্বের নির্ভরশীলতা : 

  ধারকের ধারকত্ব এর ক্ষেত্রফল A এর সমানুপাতিক, মধ্যবর্তী মাধ্যমের তড়িৎ মাধ্যমাঙ্ক K এর সমানুপাতিক, পাতদ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব d এর ব্যস্তানুপাতিক ।

ধারকের সংযোগ (Combination of Capacitors)

     বিশেষ কাজে একাধিক ধারককে এক সাথে ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। একাধিক ধারককে একত্রে ব্যবহার করাকে ধারকের সংযোগ বা সমবায় বা সন্নিবেশ বলে । 

     সংযুক্ত ধারকগুলো একত্রে একটি ধারকের ন্যায় ক্রিয়া করে। ধারকের সংযোগ দু প্রকার; যথা -

(১) শ্রেণি সংযোগ (Series Combination) ও

(২) সমান্তরাল সংযোগ (Parallel Combination)

 

তুল্য ধারক ও তুল্য ধারকত্ব

ধারকের সংযোগের পরিবর্তে যে একটি মাত্র ধারক ব্যবহার করছে সংযোগের বিভব পার্থক্য ও আধানের কোনো পরিবর্তন হয় না তাকে ঐ সংযোগের তুল্য ধারক বলে আর তার ধারকত্বকে ঐ সংযোগের তুল্য ধারকত্ব বলে।

     ব্যাখ্যা : ধরা যাক, কোনো বর্তনীতে A, B, D, E ....... ইত্যাদি অনেকগুলো ধারক একত্রে ব্যবহার করা হলো। ধারকগুলোর দুই প্রান্তের তথা বর্তনীর যে দুই বিন্দুর সাথে এগুলোকে যুক্ত করা হয়েছে, সেই দুই বিন্দুর বিভব পার্থক্য এবং আধান হলো যথাক্রমে V এবং Q । একত্রে এই সকল ধারককে এক কথায় বলা হয়, ধারকের সংযোগ বা সমবায় । ধরা যাক, এই ধারকগুলোর ধারকত্ব যথাক্রমে C1, C2, C3, C4 ... ইত্যাদি। এখন যদি এতগুলো ধারক ব্যবহার না করে একটি মাত্র ধারক দ্বারা এগুলোকে এমনভাবে প্রতিস্থাপন করা হয় যাতে তার দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য V হয় এবং আধান Q বজায় থাকে, তবে এই একটি মাত্র ধারককে ঐ সংযোগ বা সমবায়ের তুল্য ধারক বলা হয় । আর এই প্রতিস্থাপিত ধারকের ধারকত্ব যদি C হয় তবে ঐ সংযোগের বা সমবায়ের তুল্য ধারকত্বই হবে C

 ধারকের শ্রেণি সংযোগ

     ধারকের যে সংযোগে প্রথম ধারকের দ্বিতীয় পাতের সাথে দ্বিতীয় ধারকের প্রথম পাত, দ্বিতীয় ধারকের দ্বিতীয় পাতের সাথে তৃতীয় ধারকের প্রথম পাত এবং এরূপে ধারকগুলো সংযুক্ত থাকে, তাকে ধারকের শ্রেণি সংযোগ বলে [চিত্র ২.১৭]।

চিত্র :২.১৭

শ্রেণি সংযোগে তুল্য ধারকত্ব :

    কোনো তড়িৎ কোষ থেকে যদি + Q আধান প্রথম ধারকের প্রথম পাতে প্রদান করা হয় তাহলে তা অন্য পাতের ভেতরের পৃষ্ঠে - Q আধান আবিষ্ট হবে এবং + Q আধান দ্বিতীয় ধারকের

প্রথম পাতে প্রবাহিত হবে। এই প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে। সুতরাং প্রতিটি ধারকের এক পাত + Q এবং অন্যপাত - Q আধান লাভ করে। যদি ধারকগুলোর পাতদ্বয়ের মধ্যে বিভব পার্থক্য যথাক্রমে V1, V2, V3 ইত্যাদি হয়, তবে শ্রেণি সংযোগের প্রথম পাত এবং শেষ পাতের বিভব পার্থক্য হবে,

     V = V₁ + V₂+ V3 ... (2.30)

     যদি ধারকগুলোর ধারকত্ব যথাক্রমে C1, C2, C3 হয় তবে

V1=QC1,V2=QC2,V3=QC3..  (2.31)

     এখন যদি ধারকের সংযোগের পরিবর্তে এমন একটি ধারক ব্যবহার করা হয় যার দুটি পাতের বিভব পার্থক্য V এবং তার আধান Q হয় তবে তার ধারকত্ব তথা সংযোগের তুল্য ধারকত্ব Cs, হবে,

Cs=QV

বা, V=QCs.. (2.32)

সুতরাং শ্রেণি সংযোগের তুল্য ধারকত্বের বিপরীত রাশি ধারকগুলোর ধারকত্বের বিপরীত রাশির সমষ্টির সমান ।

     দেখা যায় যে, শ্রেণি সংযোগে তুল্য ধারকত্ব সংযোগের যে কোনো ধারকের ধারকত্বের চেয়ে ক্ষুদ্রতর। যখন কতগুলো বড় ধারক থেকে একটি ছোট ধারক তৈরির প্রয়োজন হয় তখন এরূপ সংযোগ ব্যবহার করা হয়।

চিত্র :২.১৮

ধারকের সমান্তরাল সংযোগ

     যে সংযোগে ধারকগুলোর ধনাত্মক পাতগুলো একটি সাধারণ বিন্দুতে এবং ঋণাত্মক পাতগুলো আর একটি সাধারণ বিন্দুতে বা ভূমির সাথে সংযুক্ত থাকে তাকে ধারকের সমান্তরাল সংযোগ বলে। 

    ২.১৮ চিত্রে তিনটি ধারকের সমান্তরাল সংযোগ দেখানো হলো, যেখানে ধনাত্মক পাতসমূহ কোষের ধনাত্মক প্রান্তে এবং ঋণাত্মক পাতগুলো কোষের ঋণাত্মক প্রান্তের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে।

সমান্তরাল সংযোগে তুল্য ধারকত্ব

   তড়িৎকোষ থেকে + Q আধান প্রদান করা হলে, এ আধান ধারকগুলো তাদের ধারকত্ব অনুসারে ভাগ করে নেয়। যদি ধারকগুলোতে আধানের পরিমাণ যথাক্রমে Q1,Q2 ও Q3 হয় তবে মোট আধান হবে,

Q = Q1 + Q2 + Q3… (2.34)

   যেহেতু প্রতিটি ধারকের দুটি পাত কোষের দুটি প্রান্তের সাথে যুক্ত, সুতরাং প্রতিটি ধারকের বিভব পার্থক্য একই হবে । ধরা যাক, এই বিভব পার্থক্য V। যদি ধারকগুলোর ধারকত্ব যথাক্রমে C1, C2, C3, হয়, তবে

Q1=C1 V, Q2=C2 V, এবং Q3=C3 V… (2.35)

   এখন যদি ধারকের সংযোগের পরিবর্তে এমন একটি ধারক ব্যবহার করা হয় যার দুটি পাতের বিভব পার্থক্য V এবং যাতে আধান Q হয় তবে তার ধারকত্ব তথা সংযোগের তুল্য ধারকত্ব Cp হবে

CpQV

Q = Cp V

Content added || updated By

ধারকের শক্তি ও ব্যবহার

     একটি আহিত ধারক প্রচুর পরিমাণে শক্তি তড়িৎ বিভব শক্তি হিসেবে সঞ্চয় করে। একটি আহিত ধারকের শক্তি হলো একে আহিত করতে প্রয়োজনীয় মোট কাজের পরিমাণ। আবার একে ক্ষরিত হতে দেয়া হলে ঐ শক্তি ফিরে পাওয়া যায়।

     ধরা যাক, কোনো ধারকের ধারকত্ব C। আহিত করার সময় এর পাতে Q পরিমাণ আধান দেওয়ায় এর পাতদ্বয়ের বিভব পার্থক্য হলো V এবং আহিত করতে U পরিমাণ কাজ করতে হলো। সুতরাং ধারকটিতে সঞ্চিত শক্তির পরিমাণ U। এখন ধারকের পাতে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আধান dQ প্রদান করতে যদি dU পরিমাণ কাজ হয় এবং এর ফলে ধারকটির শক্তি dU পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে,

   dU = VdQ

বা, dU=QCdQ

      আহিত করার সময় ধারকটিতে Q = 0 থেকে Q = Q পরিমাণ আধান প্রদান করা হলে এর শক্তি U = 0 থেকে U = U তে উন্নীত হয়। সুতরাং উপরিউক্ত সমীকরণকে এ সীমার মধ্যে যোগজীকরণ করে মোট কাজের পরিমাণ পাওয়া যাবে। 

   একটি আহিত ধারকে সঞ্চিত শক্তি নির্ভর করে ধারকে সঞ্চিত আধান, ধারকের দুই পাতের বিভব পার্থক্য এবং ধারকের ধারকত্বের ওপর। একটি নির্দিষ্ট ধারকে সঞ্চিত শক্তি তার আধানের বর্গের সমানুপাতিক ।

ধারকের ব্যবহার (Uses of Capacitors )

     নিম্ন বিভবে তড়িতাধান জমা করার জন্য ধারক ব্যবহৃত হয়। বেতার, টেলিগ্রাফ ও টেলিফোনে ধারক ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত দু প্রকারের ধারক বেশি ব্যবহৃত হয়। স্থিরমান ধারক ও পরিবর্তনশীল ধারক। 

     

চিত্র :২.১৯

(ক) স্থিরমান ধারক :

   এ প্রকার ধারকে অনেকগুলো টিনের পাত পর পর সাজানো থাকে। টিনের পাতগুলোর মাঝে অভ্রের পাত বা মোমে ডুবানো কাগজ বা সিরামিক বসানো থাকে। টিনের একটি অন্তর একটি পাত একত্রে সংযুক্ত থাকে যাতে প্রতিটি পাতের উভয় পৃষ্ঠই আলাদা পাত হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এক সেট পাত P বিন্দুতে এবং অপর সেট পাত R বিন্দুতে সংযুক্ত থাকে [চিত্র ২.১৯]।

     P ও R বিন্দুর একটি ভূ-সংযুক্ত থাকে। এর সাহায্যে অল্প জায়গার মধ্যে বিরাট ক্ষেত্রফলের দুটি চ্যাপ্টা পাতের একটি তুল্য ধারক পাওয়া যায়। এখানে অভ্র, সিরামিক বা মোমে ডুবানো কাগজ অন্তরক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। স্থায়িত্ব বৃদ্ধি এবং শক্তিক্ষয় হ্রাস করার জন্য অন্তরক হিসেবে আজকাল কাগজের পরিবর্তে পাতলা পলিস্টারিনের স্তর ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে অবশ্য ইলেকট্রোলাইটিক ধারকের ব্যবহার বেশ বাড়ছে।     

(খ) পরিবর্তনশীল ধারক :

      দুই সেট ধাতব পাত দ্বারা পরিবর্তনশীল ধারক তৈরি করা হয়। এর এক সেট স্থির থাকে। অপর সেট একটি দণ্ডের সাথে আটকানো থাকে। দণ্ডটি ঘুরালে এই সেটটি স্থির সেটের ফাঁকে ঘুরতে পারে [চিত্র ২.২১]। এক্ষেত্রে ডাইইলেকট্রিক মাধ্যম হচ্ছে বায়ু। দণ্ডটি ঘুরালে পাতগুলোর কার্যকর ক্ষেত্রফলের পরিবর্তন হয়। সুতরাং ধারকত্বের পরিবর্তন হয়। বেতার যন্ত্রের টিউনিং-এর কাজে এটি ব্যবহৃত হয়।

দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার : 

      দৈনন্দিন জীবনে নানা প্রকার বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রোনিক যন্ত্রপাতিতে ধারক ব্যবহৃত হয়। রেডিও, টিভি, ফোন, ফ্যান, টিউবলাইট প্রভৃতিতে আমরা ধারকের ব্যাপক ব্যবহার দেখতে পাই।(খ) পরিবর্তনশীল ধারক : দুই সেট ধাতব পাত দ্বারা পরিবর্তনশীল ধারক তৈরি করা হয়। এর এক সেট স্থির থাকে। অপর সেট একটি দণ্ডের সাথে আটকানো থাকে। দণ্ডটি ঘুরালে এই সেটটি স্থির সেটের ফাঁকে ঘুরতে পারে [চিত্র ২.২১]। এক্ষেত্রে ডাইইলেকট্রিক মাধ্যম হচ্ছে বায়ু। দণ্ডটি ঘুরালে পাতগুলোর কার্যকর ক্ষেত্রফলের পরিবর্তন হয়। সুতরাং ধারকত্বের পরিবর্তন হয়। বেতার যন্ত্রের টিউনিং-এর কাজে এটি ব্যবহৃত হয়।

Content added || updated By

অপরিবাহী ও ডাইইলেকট্রিক

     আমরা জানি, এক শ্রেণির পদার্থ আছে, তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রভাবে যাদের মধ্য দিয়ে আধান মুক্তভাবে চলাচল করতে পারে । এদেরকে বলা হয় পরিবাহী। ধাতব পদার্থসমূহ এ শ্রেণির অন্তর্গত। আরেক শ্রেণির পদার্থ আছে যাদের বলা হয় অপরিবাহী বা অন্তরক বা ডাইইলেকট্রিক বা পরাবৈদ্যুতিক মাধ্যম, যাদের মধ্য দিয়ে আধান চলাচল করতে পারে না । রাবার, অ্যাম্বার, কাচ ইত্যাদি এদের মধ্যে পড়ে।

     আমরা জানি, কোনো পরিবাহীর বা একাধিক পরিবাহীর সমন্বয়ে গঠিত কোনো সমাবেশের বিভব বৃদ্ধি করলে এটি আধান ধরে রাখতে পারে। এই পরিবাহী বা সমাবেশকে বলা হয় ধারক। দেখা গেছে যে, একটি সমান্তরাল পাত ধারকের দুই পাতের মাঝখানে কোনো ডাইইলেকট্রিক রাখলে ধারকের ধারকত্ব বৃদ্ধি পায়। এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে ডাইইলেকট্রিকের মধ্যে এমন কী আছে যা ধারকের ধারকত্ব বাড়িয়ে দেয়? ডাইইলেকট্রিকের উপস্থিতিতে ধারকত্ব বৃদ্ধির অর্থ হচ্ছে একই আধানের জন্য ভোল্টেজ তথা বিভব পার্থক্য কমে যাওয়া। যেহেতু বিভব পার্থক্য হচ্ছে ধারকের তড়িৎ ক্ষেত্রের যোগজ, কাজেই আমরা বলতে পারি ধারকের পাতের আধান একই থাকলেও ধারকের অভ্যন্তরে তথা দুই পাতের মাঝে তড়িৎ ক্ষেত্র হ্রাস পায়।

       আবার ধারকের দুই পাতের মাঝখানে পরিবাহী মাধ্যম থাকলেও তড়িৎ ক্ষেত্র হ্রাস পায়, কেননা ধারকের পাতের মুখোমুখি পরিবাহীর দুই পৃষ্ঠে আবিষ্ট আধানের উদ্ভব হয়। কিন্তু সমপরিমাণ ডাইইলেইট্রিকের জন্য তড়িৎ ক্ষেত্রের হ্রাস অনেক বেশি হয়, কেননা ডাইইলেকট্রিক মাধ্যমে কোনো মুক্ত আধান থাকে না। আর যদি দুই পাতের মধ্যবর্তী স্থান ডাইইলেকট্রিক দিয়ে সম্পূর্ণরূপে পূর্ণ করা হয়, তাহলে তড়িৎ প্রাবল্য শূন্য হয়। এর থেকে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রভাবে ডাইইলেকট্রিকের অভ্যন্তরে আধানের সামান্য সরণ হয় ফলে ডাইইলেকট্রিকের দুই পৃষ্ঠে আবিষ্ট আধানের উদ্ভব ঘটে।

     ধারকের পাতদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে কোনো ডাইইলেকট্রিক থাকাকালে ধারকত্ব C এবং ডাইইলেকট্রিক না থাকাকালে ধারকত্ব C0 হলে এই দুই অবস্থায় ধারকত্বের অনুপাত সর্বদা একটি ধ্রুব সংখ্যা হয়। এই ধ্ৰুৰ সংখ্যাকে ঐ ডাইইলেকট্রিক মাধ্যমের ডাইইলেকট্রিক ভেদনযোগ্যতা বা তড়িৎ মাধ্যমাঙ্ক বলে।

   K=CC0=ডাইইলেকট্রিক পূর্ণ ধারকের ধারকত্ব/ডাইইলেকট্রিক শূন্য ধারকের ধারকত্ব 

Content added || updated By
Promotion